একান্ত সাক্ষাৎকারে শফিকুল ইসলাম শফি-স্মার্ট বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে শেখ হাসিনার সাহসী অভিযাত্রা

- আপডেট সময় : ০৪:৪৯:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৪৫৬ বার পড়া হয়েছে
সেলিম চৌধুরীঃ নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় শ্রমিকলীগ পটিয়া পৌরসভার সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফি দৈনিক জনতা’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২১ সালের মধ্যে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই সময়ের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র দূর করে দেশের মানুষকে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সব রকমের প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক জীবন বদলে ফেলেছে বাংলার মানুষ। একইসঙ্গে ডিজিটাল সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট ভবিষ্যৎপ্রজন্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে আ.লীগ
সরকার। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি মৌলিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। কারণ একটি দেশকে স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে হলে, তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর সেটি তখনই পুরোপুরিভাবে সম্ভব, যখন সুশিক্ষিত ও আত্মপ্রত্যয়ী মায়েদের কোলে বেড়ে উঠবে একটি প্রজন্ম। উগ্রবাদমুক্ত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, স্বাবলম্বী, কর্মঠ নারীদের সন্তানরা ছোট থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধসম্পন্ন, সৃষ্টিশীল ও দেশপ্রমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলেই অর্জিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ যেমন এক যুগ আগে অসম্ভব মনে হয়েছিল, কিন্তু আজ তা দৃশ্যমান। তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনও একটি চলমান প্রক্রিয়া, একটি প্রজন্মকে মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা দুঃসাহসী ও বৈপ্লবিক। তবে ভবিষ্যতের জন্য টেকসই জাতি ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে এর কোনও বিকল্প নাই।
একারণে ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি ভিত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে, নাগরিকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে। এর আগে, ‘স্ট্রাইভিং টু রিয়ালাইজ দ্য আইডিয়ালস অব মাই ফাদার’ শিরোনামে লেখা দীর্ঘ প্রবন্ধে টেকসই ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, স্বৈরাচার, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের কড়াল গ্রাস থেকে মানুষকে মুক্ত করে আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথযাত্রা হিসেবে তিনটি বিশেষ ধাপের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। সেগুলো হলো– বঙ্গবন্ধুর আদর্শ উপলব্ধি ও বাস্তবায়নের সংগ্রাম, জনগণের সাতটি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পরিকল্পনা ও অক্লান্ত শ্রমের মাধ্যমে বা বাস্তবায়ন করা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনমান আধুনিক পৃথিবীর উপযোগী করে তোলার জন্য দেশকে প্রস্তুত করা। নিজের লেখা প্রবন্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমার বাবার আইডিয়াগুলোকে আমি দেশ গঠনের জন্য বাস্তব কর্মসূচিতে পরিণত করতে পেরেছি। কারণ দেশকে নিয়ে আমার বাবার সারা জীবনের চিন্তা-চেতনা এবং পরিকল্পনাগুলোর ব্যাপারে আমার জানাশোনা ছিল এবং বাবার সংস্পর্শে থাকার কারণে বিষয়গুলো আমি বুঝতে শিখেছিলাম। ফলে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য বাবার দর্শন বাস্তবায়ন করতে সুবিধা হয় আমার। বাবার যে মূলনীতিগুলো আমাকে সবসময় পথ দেখিয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সবসময় অবিচল থাকা, সহানুভূতিশীল থাকা, কর্মপদ্ধতি ঠিক করা এবং তা বাস্তবায়ন করা।আসুন তাহলে, একটু বোঝার চেষ্টা করি– বলা চলে একরম ইন্টারনেটহীন বিশ্বে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে কীভাবে স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মনে রাখবেন, আজ যে ‘স্মার্ট প্রজন্ম’ অর্জনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ, তার ভিত্তি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতের স্থাপন করা। স্বাধীনতাপরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার শুরুতেই তিনি তৎকালীন ৮০ শতাংশ জনগণের বসবাসস্থল গ্রামগুলোকে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেন। এমনকি নতুন প্রজন্মের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা, নারী শিক্ষা, সর্বোস্তরের মানুষের জন্য সাম্যভিত্তিক অর্থনৈতিক মুক্তি, অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা কায়েম, মানবিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন জাতির পিতা।
এবিষয়ে আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই জানাচ্ছেন, কীভাবে কৃষিভিত্তিক উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রামকে স্বনির্ভর করে তোলা যায়– সেই বিষয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলতেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন- দেশে আধুনিক শিল্পায়ন, সড়ক-নির্মাণ, নদী খনন, রেল সংযোগের পরিধি বাড়ানো, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ বহুমুখী ক্ষেত্রে দ্রুত দেশকে পুনর্গঠিত করার। বঙ্গবন্ধু চাইতেন- প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ধানের জমির পাশ দিয়ে ভালো সড়ক হবে, যাতে কৃষকদের প্রতিষ্ঠা পেতে সুবিধা হয়। এছাড়াও গ্রামে গ্রামে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক জীবনের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।যুগের চাহিদা মিটিয়ে আজ ডিজিটাল সময়ে এসে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অনুপ্রেরণাও বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা থেকে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।