চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার

- আপডেট সময় : ১০:০২:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৪২৩ বার পড়া হয়েছে
রুপম চাকমাঃ বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি
রাঙামাটির ভ্যালি চাকমা। বাংলাদেশের চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার। উচ্চ আদালতে চাকমা সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় নারী আইনজীবী। বাবার অনুপ্রেরণায় আইন পড়তে উদ্ধুদ্ধ হন তিনি। ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে আইনে ভর্তি হন। সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে পর্যায়ক্রমে জজকোর্ট ও হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তারপর ব্যারিস্টারি পড়তে পাড়ি জমান লন্ডনে।
২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর লন্ডনের লিংকন্সইন থেকে অফিসিয়ালি ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে উচ্চ আদালতে আইনপেশা শুরু করেছেন তিনি। ভ্যালি বিয়ে করেছেন ঢাকার অধিবাসী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অরহণ দেওয়ানকে। নিজ সম্প্রদায়ের অসহায় মানুষকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের জন্য কাজ করতে চান, আইন পেশায় অবদান রাখতে চান উদীয়মান এই নারী ব্যারিস্টার। তার জীবনে নানা অজানা বিষয় ঢাকা পোস্টের কাছে তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম।
জন্ম-পারিবারিক পরিচয়
জন্ম ১৯৯১ সালে রাঙামাটি পাবর্ত্য জেলায়। বাবার নাম কল্যাণ মিত্র চাকমা। বাবা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার হিসেবে বেনাপোল অফিসে রয়েছেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমার বড় বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে এখন গৃহিণী। বোনের স্বামী ইনকাম ট্যাক্সের ডেপুটি কমিশনার। ছোট ভাই নর্থ সাউথে ফার্মেসিতে গ্রাজুয়েশন শেষ করে স্বনামধন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। ২০২১ সালের নভেম্বরের ৫ তারিখে বিয়ে করেছি। স্বামীর নাম অরহণ দেওয়ান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকার অধিবাসী। পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
ব্যারিস্টারি কল পাওয়ার দিনে স্বামী ও মায়ের সঙ্গে ভ্যালি চাকমা
পড়ালেখা ও ব্যারিস্টারি ডিগ্রি
বাবার চাকরির বদলিজনিত কারণে এক বছর বয়স থেকে আমি খুলনায় ছিলাম। খুলনা সরকারী করনেশন বালিকা বিদ্যালয়ে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশুনা করি। এরপর চট্টগ্রাম চলে আসি। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করি। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ২০০৮ সালে আমি এইচএসসি পাস করি। পরে ঢাকায় চলে আসি। ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে ভূইয়া একাডেমিতে ভর্তি হই। ২০১৩ সালে আইনে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি। ২০১৫ সালে এলএলএম কমপ্লিট করি ধানমন্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০১৬ সালে আামি ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। তারপর ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড যাই। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর লন্ডনের লিংকন্সইন ইন থেকে অফিসিয়ালি ব্যারিস্টারি ডিগ্রি দেশে নিয়ে আসি।
কার অনুপ্রেরণায়,কেন আইন পড়লেন?
আমার বাবা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্টুডেন্ট ছিলেন। রাজনীতি পছন্দ করতেন। আমার দাদা, চাচা সবাই রাজনীতি করেন। বাবা চাইতেন আমি যেন ব্যারিস্টারি পড়ে রাজনীতি করি। বাবা ছোটবেলা থেকে আমাকে স্বপ্ন দেখাতেন আমি যেন ব্যারিস্টার হই। মূলত বাবার অনুপ্রেরণায় তার স্বপ্ন পূরণে আইনে ভর্তি হই।
ব্যারিস্টার ভ্যালি চাকমার সঙ্গে কথা বলছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম
আপনি চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার?
বাংলাদেশে তো অনেক নৃ-গোষ্ঠী আছে। তার মধ্যে চাকমা হচ্ছেন বৃহত্তর নৃ-গোষ্ঠী। আমার জানামতে চাকমা সম্প্রদায় থেকে বেশকিছু আইনজীবী হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে একজন চাকমা সম্প্রদায়ের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আছেন, তার নাম অ্যাডভোকেট প্রতিকার চাকমা। আমি যতটুকু জানি চাকমা সম্প্রদায় থেকে আমি সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় নারী আইনজীবী। আমার আগে সুপ্রিম কোর্টে খাগড়াছড়ির একজন নারী আইনজীবী ছিলেন। তবে আমি বাংলাদেশের চাকমা সম্প্রদায় থেকে প্রথম নারী ব্যারিস্টার। বাংলাদেশের চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যারিস্টার চাকমা সার্কেলের চিফ রাজা দেবাশিষ রায়। উনার পরেই আমি চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যারিস্টার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।
সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার হিসেবে অনুভূতি
আসলে অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। এই স্বপ্ন আমাকে দেখিয়েছিলেন আমার বাবা। বাবা বলতেন আমি যেন চাকমা সম্প্রদায়ের প্রথম নারী ব্যারিস্টার হই। বাবার সেই স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পেরেছি। এইটা অত্যন্ত আনন্দের,গৌরবের যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।